ঝিকরগাছা যশোর প্রতিনিধি : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বহুলালোচিত ঝিকরগাছার 'ফুলের রাজ্য' গদখালীতে নতুন ফুলের বাজারে ফুল ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতা ও পাইকারসহ ফুলপ্রেমী পর্যটকদের পাশাপাশি উৎসুক সাধারণ মানুষ ফুলের এই নতুন বাজার পরিদর্শনে এসে স্বস্তির পাশাপাশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ও তৎসংলগ্ন এলাকা ছেড়ে ফুলের বাজার পার্শ্ববর্তী স্থানে মনোরম পরিবেশে স্থানান্তরিত হওয়ায় সম্ভাব্য দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। ফলে,ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভুপালি সরকারের এই মহতী ও নন্দিত উদ্যোগের সফল বাস্তবায়ন সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। সোমবার (২৭/১০/২৫)প্রতিদিনের ন্যায় এদিনও প্রায় ভোর থেকে এই নতুন ফুলের বাজারে ফুল ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতি ঘটতে থাকে। উপজেলার গ্রামীণ জনপদের দূরদুরান্ত থেকে ফুল চাষীদের পাশাপাশি ফুলের পাইকাররা দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহর থেকে ফুল বিকিকিনিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফুল বাজারে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিনও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি! তবে, ফুলের বাজারদর এদিন মন্দা ছিল। ক্রেতা-বিক্রেতারা তাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে জানালেন, এই মুহূর্তে দেশে তেমন একটা পার্বণ-উৎসব দিবস আয়োজন নেই বললেই চলে। তাছাড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড কর্মসূচির তেমন ভালো খবরা-খবর নেই। সে কারণে ফুলের বিকিকিনিতে মন্দাভাব চলছে। ফুলের কাঙ্খিত বাজারদরও নেই। এটা অবশ্য সাময়িক।এমনটাই দাবি করছেন ফুলের উৎপাদক কৃষক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের পাশাপাশি মধ্যস্বত্ব ভোগীরা। এদিকে ফুলের এই নতুন বাজারের ক্রেতা বিক্রেতাদের সুবিধার্থে অবিলম্বে একটি বাইপাস লেনসহ সেড নির্মাণের পাশাপাশি গণশৌচাগার নির্মাণের জোর দাবি করা হয়েছে। ঝিকরগাছা পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাভিদ সারওয়ারের কাছে তারা এই দাবি তুলে ধরেন। এসময় জেলার কৃষি বিভাগের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন। সহকারি কমিশনার (ভূমি) তাদের যৌক্তিক দাবীর সমর্থনে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা সহকারী কমিশনার (ভূমি)র সাথে সহমত প্রকাশ করেছেন।তিনি ফুলচাষী ও বিপণনে সংশ্লিষ্টদের কল্যাণে ও তাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভূপালী সরকারকে অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানান। এসময় গদখালী ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি ও কৃষক নেতা মনজুরুল আলম, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফরসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ,ফুল চাষী ও ফুল ব্যবসায়ী বৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য ফুলের রাজধানীখ্যাত গদখালি, নাভারন, পানিসারা, নির্বাসখোলা,ঝিকরগাছা সদর, শংকরপুর ও মাগুরা ইউনিয়নের একাংশ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলচাষের জন্য বিশেষ সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছে। ফুল চাষের সাথে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৫সহস্রাধিক কৃষক পরিবার ও উদ্যোক্তা আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুল উৎপাদক জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার উৎপাদিত মানসম্মত ফুল জেলা ও বিভাগীয় শহরে দৈনন্দিন সরবরাহ হয়ে থাকে। দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ ফুল উৎপন্ন হয়ে থাকে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায়। শুধু তাই নয়, এখানকার ফুল ইউরোপের পাঁচটি দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে বলে জানাগেছে। সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, এখানকার উন্নত জাতের রংবেরঙের গোলাপ, গ্লাডিউলাস,জার্বেরা,রজনীগন্ধাসহ নানা জাতের ফুল রপ্তানির তালিকায় রয়েছে। ফুল উৎপাদন,বিপণন ও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন এই জনপদের ফুল চাষিরা। তারা নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী,কৃষিজীবী পরিবার ও জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করে চলেছেন। ফুলের উৎপাদন মৌসুম শুরু। তাই এই জনপদের ফুল চাষীদের যেন নাওয়া খাওয়ার ফুরসৎ নেই! দিনরাত ফুলের ক্ষেত পরিচর্যার পাশাপাশি নতুন বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে ফুল চাষীরা জানান ।
প্রকাশক / সম্পাদকঃ মো. জাকির হোসেন (মিথুন)
Phone No. : 01755-416262
E-mail: sotterdorpon24@gmail.com
Office: 44/1, Family Shamsher vally, Mugda Bissoroad, Dhaka, 1214.