
ইভা নার্সিং এ পড়ে দ্বিতীয় বর্ষ।ছোট ভাই নবম শ্রেণিতে পড়ে।ইভার স্বপ্ন সে নার্স হয়ে মানুষের সেবা করবে।তাই সে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করছে।
প্রায় দুমাস হলো তার মা মারা গেছে।তারপর বাবা ছেলে, মেয়েকে না জানিয়ে বিয়ে করে এনে বলল,
আজ থেকে ওহ তোর মা।ওহ যা বলবে তাই শুনবি।
সৎ মাকেও ছেলে মেয়ের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলো।বলা হলো,
আজ থেকে এরা তোমার ছেলে মেয়ে এদের ঠিকমতো দেখভাল করবে।
ছেলে মেয়ে দুটো নতুন মাকে দেখে কেমন জানি নার্ভাস হয়ে গেল।নিজের মায়ের কথা মনে পড়ে গেল।চোখের জলের আর বাঁধ মানল না।অঝর ধারায় ঝরে পড়ল।সৎ মা তাদের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
কেঁদো না।আজ থেকে আমি তোমাদের মা।
সন্তান দুটোকে বুকে জড়িয়ে আদর করল।
বাবাও তা দেখে খুশি হলো।কিন্তু সে কী!কিছুদিন যেতে না যেতে সৎ মায়ের রুপ বদল হলো।সে ছেলে মেয়েদের সাথে খারাপ আচরণ করা শুরু করলো।শুধু তাই নয় ছেলে মেয়েকে কাজের লোকের মতো খাটাচ্ছে।একটু ভুলত্রুটি হলে গায়ে হাত তুলছে মারধর করছে।প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো রিকেশন।ঠিকমতো খেতে পরতে দিচ্ছে না।বাবার কাছে অভিযোগ তুললে বলে,
সব মিথ্যে ওরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।আমাকে তাড়ানোর প্লান করছে।তুমি ওদের কথা বিশ্বাস করো না।
আমি ওদের এতো ভালোবাসি।তবুও আমার নামে বদনাম করা হচ্ছে।আমি আর এখানে থাকব না।এক্ষণি চলে যাব আমার বাপের বাড়ি।
যাক আহলাদি স্বামী বুঝিয়ে বউকে শান্ত করলো।বাপের বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত রাখল।কিন্তু সৎ মায়ের মনের ভিতর জিলাপির প্যাঁচ,কিভাবে সন্তান দুটোকে বাবার চোখে শত্রু বানাবে।রোজ রোজ স্বামীকে কানপড়া দিচ্ছে।ভুলভাল বুঝাচ্ছে।ইভা তার কথা শুনছে না।সংসারের কোনো কাজকর্ম করছে।তাকে অকারণে গালাগাল করছে,অসম্মান করছে ইত্যাদি ইত্যাদি।বাবা বাসায় আসার পর একগাদা অভিযোগ…।
এভাবে বুঝাতে বুঝাতে বাবা এক সময় সৎ মায়ের পক্ষে চলে যায়।ছেলে মেয়ে দুটোকে পর ভাবতে শুরু করে।সৎ মায়ের কথা বিশ্বাস করে তাদেরকে গালাগাল করে।আমরা প্রায়ই দেখি দ্বিতীয় বিয়ের পর কিছুকিছু পুরুষ নর পশুতে পরিণত হয়।স্ত্রী কথায় উঠবস করে।আপন ছেলে মেয়েকে শত্রু ভাবে।আজ ইভার বাবাও তাই করছে।ছেলে মেয়ে দুটোকে কারণে অকারণে শাসাচ্ছে,বকাঝকা করছে।সৎ মাকে ভালো না বাসলে,তার কথামতো না চললে বের করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।
ছেলে মেয়ে দুটোকে বাবার চোখে শত্রু বানিয়ে ও সৎ মা ক্ষান্ত হননি।এবার তাদের বের করার নতুন প্ল্যান করছে।নিজের অলংকার লুকিয়ে রেখে রটিয়ে দিয়েছে,
ইভা তার অলংকার চুরি করে, বয়ফ্রেন্ডকে আইফোন কিনে দিয়েছে।
কথাটা বাবার কানে যেতে সে তাকে খুব মারধর করে।অলংকার বের করে দিতে বলে,
ইভা কেঁদে কেঁদে কসম কেটে বলে,
বাবা বিশ্বাস কর,আমি মায়ের অলংকার চুরি করি নাই।মা মিথ্যে বলছে।আমার নামে বদনাম রটাচ্ছে।তাছাড়া আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।
সৎ মা চোখ রাঙিয়ে বলে,
ওহ মিথ্যে বলছে।আমি জানি ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।ওহ যদি অলংকার বের না করে দেয়।ওকে ঘর থেকে বের করে দাও।
বাবা তাই করলো। মেয়েকে মারধর করে বের দিতে প্রস্তুত হলো।মেয়ে ফের কেঁদে কেঁদে বাবার পা দুখানা চেপে ধরে বলে,
বাবা আমি তোমার মেয়ে।তুমি আমাকে জন্ম দিয়েছ।তুমি জান না আমি কেমন মেয়ে?বিশ্বাস কর বাবা,আমি মায়ের অলংকার চুরি করিনি।মা মিথ্যে বলছে।আমাকে তাড়িয়ে দিওনা।তুমি বাবা হয়ে যদি তাড়িয়ে দাও,আমি যাব কোথায়?
এভাবে সে কয়েকবার বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।কিন্তু বাবা বুঝেনি।সৎ মায়ের কথা বিশ্বাস করে মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।এতরাতে মেয়ে যাবে কোথায়?ঘরের দরজার সামনে অনেক্ষণ বসে বসে কাঁদে।বাবাকে দরজা খোলার জন্য কয়েকবার অনুরোধ করে।বাবা দরজা খোলে না।ইভার মনে প্রশ্ন জাগে যেখানে আপন বাবাই পর হয়ে গেল।সেখানে বেঁচে থেকেই বা কি লাভ?জীবনের প্রতি তার অনীহা চলে আসে।বাবা নামক নরপশুটির প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণার জন্ম নেয়।আর বাঁচতে মন চাই না।সে ছুটে যাই ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটির কাছে।তারপর ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।সকাল হলে লোকজন দেখে ইভা গাছের সাথে ঝুলে আছে গলায় ওড়না পেঁচানো।মূহুর্তে খবরটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে,ইভার ছোট ভাই তার মৃত্যুর কারণ বর্ণনা করে।শুধু তাই নয় “ইভার মৃত্যুর” জন্য তার বাবা আর সৎ মা দায়ী বলে জানায়।পুলিশ তা সত্যতা নিশ্চিত করে।তাদেরকে এরেস্ট করে নিয়ে যাই।